যৌথ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পন পত্রে স্বাক্ষর করছেন তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজ
আজ থেকে তিরাশি বছর আগে সিন্ধু প্রদেশের মুসলিম লীগের সভায় দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রবর্তন করেন মুহম্মদ আলী জিন্নাহ । আর আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে সেই দ্বিজাতি তত্ত্বের অসরতা প্রমাণ করে জন্ম নেয় আজকের সোনার বাংলাদেশ । নয় মাস প্রায় তিন থেকে পাঁচ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এবং প্রায় দুই লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতা প্রমাণ করে দ্বি-জাতি তত্ত্ব ছিল কতটা ভিত্তীহীন ও অন্তঃসারশূণ্য ।
পশ্চিম পাকিস্তানের অসম ও নিপীড়নমূলক শাসনে যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যখন জর্জরিত তখনই নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের কন্ঠ হয়ে আবির্ভূত হন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তিনি তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব ঘোষণা করেন । ২৫শে মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী রাতের অন্ধকারে হামলে পড়ে নিরীহ বাঙালিদের ওপরে । রক্তাক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রক্তাক্ত হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন, রক্তাক্ত হয় ঢাকা, রক্তাক্ত হয় বাংলাদেশ । স্বাধীনতার কান্ডারি শেখ মুজিবুর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় । শেখ মুজিবর রহমানের পূর্ব দিকনির্দেশনার ভিত্তিতে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় মেহেরপুর জেলার তৎকালীন বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) । অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দীন আহমদ, অস্থায়ী উপ রাষ্ট্রপতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম । অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র, কৃষি ও ত্রাণ পূণর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয় । মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন কর্ণেল এম এ জি ওসমানি । বাংলাদেশ বিভক্ত হয় এগারটি সেক্টরে । শুরু হয় বাঙালীর ঐতিহাসিক ত্যাগের অগ্নি-অভিক্ষা ।
সুদীর্ঘ সাত মাস গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে আসে নভেম্বর । এরই মধ্যে নড়বড়ে হয়ে যায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার অনেকটা অংশ । ১০ নাম্বার সেক্টরের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নৌ গেরিলারা অপারেশন জ্যাকপটের মাধ্যমে প্রায় এক রকম গুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি নৌবহর । এছাড়া গেরিলা বাহিনীর ঝটিকা আক্রমণ পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে এক রকম পঙ্গু করে দেয়।
১৯৭১ সালের ২১ শে নভেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল স্যাম মানেকশকে প্রধান করে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীকে একত্র করে গঠিত হয় যৌথ বাহিনী । বহির্বিশ্বের সকল ষড়যন্ত্র নাকচ করে দিয়ে ৪ঠা ডিসেম্বর শুরু হয় যৌথবাহিনীর আক্রমণ । ১৬ই ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পন পত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হলেন তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজ ।
আত্মত্যাগী বীর বাঙালীর জন্য এই বিজয় ছিল এক অমোঘ নিয়তি । এ এক এমন বিজয় যা বাঙালীর ভবিষ্যত রচনা করে যার রচয়িতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান । ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বাঙালী ফিরে পায় তাদের জননেতা প্রাণপ্রিয় শেখ মুজিবর রহমানকে । ইতিহাসে যা ‘ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ নামে পরিচিত ।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
প্রায় খালি হাতে যুদ্ধক্লিষ্ট এই বাংলাদেশের পুণর্নিমাণের কাজ শুরু করেন শেখ মুজিবুর রহমান । নিরক্ষর, যুদ্ধবিধ্বস্ত, ক্ষুধার্ত জনপদ । কিন্তু জাতীয় অবকাঠামো ভগ্নপ্রায় । এমতাবস্থায় জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে উত্তরণের কাজে হাত দেন । ১৯৭২ সালের ১১ই জানুয়ারি ১৯৭০ সালে পাকিস্তান আইন সভার জন্য নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ । ১২ই জানুয়ারি সংসদীয় ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন । বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ন্যাস্ত করা হয় ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন । এমন এক বাংলাদেশ যে কখনো কারো কাছে মাথা নত করবে না । কিন্তু তাঁর স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই কতিপয় পথভ্রষ্ট দেশদ্রোহীর সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে খুন করে ঘাতকরা ।
একটা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায় বাংলাদেশে । টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মাড়িয়ে আশির দশক পর্যন্ত চারটি নির্মম সেনা অভ্যুত্থান দেখতে হয় বাংলাদেশকে । অমসৃণ এই পথ ধরে এগোতে থাকে বাংলাদেশ । ক্ষমতা চলে যায় স্বৈরাচারীর হাতে । অবশেষে ১৯৯৬ সালের ৬ই ডিসেম্বর স্বৈরাচারীর পতন ঘটে ।
স্বাধীনতার এই পঞ্চাশ বছরে অনেক উত্থান পতন দেখেছে বাংলাদেশ । অবশেষে ২০০৯ সালে জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সোনালী ভবিষ্যতগাম তরনীর হাল ধরেন ।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার শপথ বাক্য পাঠ ।
বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই অসমাপ্ত স্বপ্নের বাস্তব রূপরেখা প্রদানের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সুযোগ্য জনপ্রতিনিধিগণ । তারই সুদূর প্রসারী উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল । বেশ কিছু মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার । এই সকল
আর এই উন্নয়ন যজ্ঞের এক অন্যতম প্রভাবক হিসাবে বিগত প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন সংস্থা (ডিবিএস)।
চলমান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ।
চলমান পদ্মা সেতু প্রকল্প
বিজয়যাত্রায় অংশগ্রহণকারী ডিবিএস এর সুযোগ্য নির্বাহী পরিচালক মহোদয় ও অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দ
স্বাধীনতার এই পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব মেলাতে নয়, বরং ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিভাবে একটি গুণগত মান সম্পন্ন উন্নত সমাজ তথা দেশ উপহার দেওয়া যায় সেই কল্পেই ডিবিএস কাজ করে যাচ্ছে । ডিবিএস এর বিশ্বাস- স্বাধীনতা এমন একটি গৌরবময় দায়িত্ব যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম সমুন্নত রেখে পালন করতে হয় । স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আনন্দ মিছিল ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ডিবিএস এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছিল স্বতঃস্ফূর্ত পদচারণা ।
বিজয় যাত্রায় অংশগ্রহণকারী ডিবিএস এর সহকারী কর্মসূচী ব্যবস্থাপক, ইউনিয়ন সমন্বয়কারী সহ অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দ
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্যাগ ও অনুপ্রেরণায় প্রাপ্ত আমাদের এই দেশ