সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রায়-ই একজন মানুষের পাশে বিশাল আকৃতির কলার কাদি দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। কেউ আবার তা অবিশ্বাস্য বলেও মন্তব্য করেন। কিন্তু সে বিস্ময় ও অবিশ্বাস ভেঙ্গে দিল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ‘উন্নয়ন মেলা-২০১৭’। সদ্য সমাপ্ত এ মেলায় অংশ নেওয়া মেহেরপুরের দারিদ্র বিমোচন সংস্থা (ডিবিএস) প্রদর্শন করে এমনই একটি কলার কাদি। নাম যার ‘২২ ছড়ি’।
অবাক হলেও সত্য, প্রদর্শিত ওই একটিমাত্র কাদিতে কলা ধরেছে ৭২০টি। কলার কাদিটি লম্বায় প্রায় ৬ ফুট। কলার নাম ‘২২ ছড়ি’ হলেও প্রদর্শিত এ কলার কাদিতে ছড়ি ধরেছে ২৬টি। প্রতিটি ছড়িতে ২২ থেকে ৩০টি কলা ধরেছে।
মেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় প্রদর্শিত এ বিশাল কলার কাদি সবাইকে হতবাক করেছে। ঠিক যেমন- ফেসবুকে বিশাল আকৃতির কলার ছবি সবাইকে অবাক করে। মেলায় অংশ নেওয়া অন্য স্টলগুলোর তুলনায় ডিবিএসের স্টলটিতে জটলাটা ঢের বেশি। কলার কাদি দেখতে এই দর্শনার্থীরা বিস্ময় প্রকাশে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
সংস্থাটির কৃষিবিদ সাজিদুর রহমান একুশে টিভি (ইটিভি) অনলাইনকে বলেন, অত্যন্ত সুস্বাদু এই কলা একেবারেই দেশি জাতের। তবে এটি কিন্তু দেশের সব জায়গায় পাওয়া যায় না।আমরা মেহেরপুরে এ জাতের কলার চাষ এখনও ধরে রেখেছি।
তিনি বলেন, আমরা বাড়িতে বাড়িতে চাষের জন্য এই কলার চারা দিয়ে থাকি। একইসঙ্গে চাষ পদ্ধতির প্রশিক্ষণও দিই। অত্যন্ত পুষ্টিকর এই কলার ফলন বেশ ভাল। খেতেও খুব সুস্বাদু। কোনো বিচি নেই। তবে দেশের লোকেরা এর কদর বোঝে না বলে প্রায় হারিয়েই গেছে। তাই আমরা এটি আবার সহজলভ্য করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে বাণিজ্যিক চাষের জন্য এই কলা নয়।
সাধারণ অন্যান্য কলাচাষে ১০ মাসেই ফল পাওয়া যায়। তবে এই ২২ ছড়ি’র চারা থেকে ১২ মাসে ফল আসে। যে কারণে বাণিজ্যিক চাষে এই কলায় লাভ তুলনামূলক কম হয়। তবে বাড়িতে চাষের জন্য এই কলা বেশ লাভজনক। কেননা, উৎপাদন খরচ তেমন নেই। আবার ফলন বেশি। তবে ২২ ছড়ি বলে ২২ কাদি কলাই পাওয়া যায় এমন নয়। কখনো কখনো কম-বেশি হয়। সর্বোচ্চ ৩০ ছড়ি পর্যন্তও হতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২২ ছড়ি জাতের কলা চাষ করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন মেহেরপুর জেলা শহরের হাসমত আলী।এলাকার অনেকেই এই জাতের কলা চাষে ঝুঁকছেন। তাই চারার মূল্যও বেড়ে গেছে। হাসমত আলীর বাড়ি শহরের বামনপাড়ায়।হাসমত আলীর কলা বাগানে আছে- সবরি ও মেহের সাগর কলা। এ দুই জাতের কলার সঙ্গে বাগানের এক কোণে ২২ ছড়ি জাতের বেশ কয়েকটি কলাগাছ আছে। দুটি গাছ কলার ভারে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তাই বাঁশের খুঁটি দিয়ে কাঁদির ভার থেকে গাছ দুটি রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২২ ছড়ি জাতের কলা দেখতে এলাকার অনেকেই কলাবাগানে এসে ভিড় করেন। এই কলাগাছগুলো সবরি কিংবা মেহের সাগর জাতের কলাগাছের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা।
হাসমত আলী জানান, তিনি চার-পাঁচ মাস আগে ভারতে এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে এই জাতের কলার খোঁজ পান। ফেরার পথে নিয়ে আসেন বেশকিছু চারা। নিজের কলার বাগানের একপাশে সেই চারা রোপণ করেন। এখন একটি গাছে কম করে হলেও ৫০০ কলা ধরেছে। এক টাকা করে বিক্রি করলেও প্রতি গাছ থেকে ৫০০ টাকা আসবে।যা অন্য কলাগাছ থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। আগামীতে তিনি ২২ ছড়ি জাতের কলার আবাদে জোর দেবেন বলেও জানান।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আমিন এই কলার চাষাবাদ প্রসঙ্গে বলেন, `মেহেরপুর অঞ্চলে এ জাতের কলা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হয় না, কেউ কেউ শখের বশে করেন। তবে বাণিজ্যিকভাবেও ২২ ছড়ি জাতের কলাচাষ খুবই লাভজনক। এই ধরনের কলার চাষ রাঙামাটি অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
এ কলার প্রাপ্তি ও চাষ সম্পর্কে ডিবিএসের কৃষিবিদ সাজিদুর রহমান একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, মেহেরপুর ডিবিএস কার্যালয়ে এ কলার চারা পাওয়া যায়।চারা রোপনের ২০দিন আগে গর্ত খুড়ে রাখতে হবে।গর্তটি ৩ হাত বর্গের হতে হবে।গর্তের গভীরতা ২ হাত হতে হবে।গর্তের মধ্যে জৈব সারসহ অল্প রাসায়নিক সার (টিএসপি ও পটাশ) দিতে হবে। চারা লাগানোর ২০ দিন আগেই এ সার গর্তে প্রয়োগ করতে হবে।এরপর অন্যান্য গাছের মতো গরু-ছাগলে যাতে না খায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।সর্বোশেষ ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যাবে।অর্থাৎ কলা পাকিয়ে ঘরে তুলতে প্রাই ১২ মাস লেগে যায়।
সাজিদুর রহমান একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে জানান, অল্পখরচে এ কলার চাষ সম্ভব বলে দিনদিন মেহেরপুরে এ কলার চাষ বাড়ছে। বর্তমানে মেহেরপুরে একশ’র বেশি বাড়িতে এ কলার চাষ হচ্ছে। আমাদের ভবিষৎ পরিকল্পনা বাংলাদেশ এগ্রিকালসার রিসার্স ইনস্টিটিউটের সহায়তায় সারা বিশ্বে এ কলার চাষ ছড়িয়ে দিব। আমরা এ কলার চাষে আগ্রহী অনেককেই পরামর্শ দেয়। চারা পেতেও সহায়তা করি।